কবি ফররুখ আহমদ: জীবন ও সাহিত্যকর্ম

কবি ফররুখ আহমদ :  জীবন ও সাহিত্যকর্ম
মোঃ রুহুল কুদ্দুস
সহকারী অধ্যাপক
বাংলা বিভাগ

মুসলিম নবজাগরণের আহবানকে পূর্ণতা প্রদান ও সাহিত্যে ইসলামী ইতিহাস— ঐতিহ্যের সফল ব্যবহারের মাধ্যমে যিনি বাংলা সাহিত্যে মুসলিম বিশ^াস ও চিন্তা ধারার সাহিত্য সাধনাকে শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় সাহিত্য ধারায় পরিণত করেন তিনি মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ। বাংলা সাহিত্যের আকাশে ফররুখ আহমদের আবির্ভাব ঘটে বিশ শতকের চল্লিশের দশকে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এ কবি একাধারে গীতিকবিতা, কাব্য, সনেট, নাট্যকাব্য, ব্যঙ্গকবিতা, শিশুতোষ কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও গদ্য রচনায় বিশেষ পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছেন। তবে তিনি ছিলেন মূলত কবি এবং কবি হিসেবে তাঁর প্রতিভার অসাধারণ বিকাশ ঘটেছে। তাঁর কাব্যের গঠনে যে বিস্ময়কর শিল্পনৈপূণ্য ও স্বাতন্ত্র্য পরিলক্ষিত হয়; তা তাঁকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিধর মৌলিক প্রতিভাবান কবির মর্যাদা দান করেছে।
কবির জন্ম ও শৈশবঃ বর্তমান মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নের মাঝআইল গ্রামে ১৯১৮ সালের ১০জুন বিখ্যাত সৈয়দ বংশে ফররুখ আহমদ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ হাতেম আলী (পুলিশ ইনসপেক্টর) এবং মায়ের নাম রওশন আক্তার জাহান। কবির জন্মের ছ’বছর পর (১৯২৪) তাঁর মা মৃত্যুবরণ করেন। মায়ের মৃত্যুর পর পিতা হাতেম আলী পুনরায় বিয়ে করেন। এরপর কবির শৈশব কেটেছে  প্রধানত তাঁর দাদির আশ্রয়ে।
শিক্ষাজীবনঃ বাল্যকালে মাঝআইল গ্রামের পাঠশালায় তার হাতেখড়ি পরে ১৯২৭ সালে কিশোর ফররুখ তার বড় ভাই এর কর্মক্ষেত্র কলকাতা গমন করেন। সেখানে তালতলা মডেল স্কুল এবং বালিগঞ্জ সরকারি হাইস্কুলে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। তবে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন খুলনা জিলা স্কুল থেকে ১৯৩৭ সালে। কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন ১৯৩৯ সালে। কবি স্কটিশ চার্চ কলেজে দর্শন ও পরে সেন্টপল কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন কিন্তু পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি।
কবি ও সমালোচক মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ বলেছেন, বুদ্ধদেব বসু, প্রমথ নাথ বিশি, বিষ্ণুদে এঁরা ছিলেন ফররুখ আহমদের কলেজ জীবনের শিক্ষক। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী বলে ফররুখ আহমদকেও সে সমযে অনেকে দ্বিতীয় আশুতোষ বলে আখ্যায়িত করতো। তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন সত্যজিৎ রায়, ফতেহ লোহানি, সুভাষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
পারিবারিক জীবনঃ কবির নানা মোহাম্মদ হুরমাতুল্লাহর আগ্রহে ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসে আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুনের সঙ্গে ফররুখ আহমদের শুভ বিবাহ হয়। খুশিতে বিবাহ উপলক্ষে লেখা ‘উপহার’ শীর্ষক কবিতার উচ্চারণ করেছেন—
“আমরা দুজন ধরার ধুলায় বাঁধব বাসর ঘর
রবে চিরদিন এ স্বয়ম্বরে সত্যের স্বাক্ষর।
রবে চিরদিন বিবাহ লগ্ন
রইব প্রেমের মধুতে মগ্ন”।
কবির স্ত্রীর ডাক নাম লিলি। তিন কন্যা ও আট পুত্রের জনক কবি তাঁর স্ত্রীকে প্রাণাধিক ভালোবাসতেন। ‘লিলি’ নামে একটি কবিতা ‘মৃত্তিকা’ পত্রিকার বসন্ত ১৩৪১ সংখ্যায় ছাপা হয়। কবি লেখেন—
“পদ্ম বনে প্রভাত সমীরণে যে মেলেছে দল,
দেখেছে যে লীলা কমল রক্তিম উজ্জ্বল।”
কর্মজীবনঃ ফররুখ আহমদের কর্মজীবন কেটেছে বিভিন্ন ঘাত—প্রতিঘাতে। তিনি প্রায়শই ক্ষত—বিক্ষত হয়েছেন কিন্তু কখনো কোনে প্রতিকূল অবস্থার কাছে মাথা নত করেননি। কলকাতা জীবনের কোনো চাকরিই তাঁর স্থায়ী হয়নি।  ১৯৪৩ সালে আই,জি প্রিজন অফিসে, ১৯৪৪ সালে সিভিল সাপ্লাইতে, ১৯৪৫ সালে মাসিক মোহাম্মাদী পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে এবং ১৯৪৬ সালে জলপাঁইগুড়ির একটি ফার্মে চাকরি করেন।
দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালের শেষ দিকে কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় এসে প্রথমে ঢাকা বেতারে অনিয়মিত এবং পরে ১৯৫২ সালে নিয়মিত স্টাফ আর্টিস্ট বা নিজস্ব শিল্পী হিসেবে আমৃত্যু কাজ করেন। এ সময় ঢাকা বেতারে ছোটদের আসর ‘খেলাঘর’ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।  ঢাকা বেতার কেন্দ্রে ফিরেই ফররুখ আহমদের নতুন সাহিত্যিক জীবন শুরু হয়।
জীবন দর্শনঃ গোড়াতে ফররুখ আহমদ কোনো বিশেষ জীবন আদর্শে বিশ^াসী ছিলেন না। মানবতাবাদী এ কবি নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মুক্তি চাইতেন কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো পথ নির্দেশ তার ছিল না। স্বাপ্নিক, কল্পনা প্রবণ ও সৃজনশীল এ কবির চাল—চলন ছিল রোমান্টিক ধরনের। পরবতীর্কালে ইসলামি জীবনবোধ ও জীবনাদর্শে কবি গভীর প্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন।

পৃথিবীর চলমান ঘটনা ও অবস্থা তার সচেতন কবি সত্তাকে সর্বদা জাগ্রত করেছে কিন্তু কখনো রাজনৈতিক প্রভাবে তাড়িত হননি। ইসলামের প্রতি অবিচল আস্থা এবং ব্যক্তি জীবনে ইসলামি আদর্শের প্রতিফলনে তিনি ছিলেন অতিশয় আগ্রহী।

সাহিত্যকর্মঃ বিশ শতকের চল্লিশের দশকের প্রথম থেকেই ফররুখ আহমদের কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। চল্লিশের দশকের আধুনিক রোমান্টিক কবি সৈয়দ আলী আহসান, আবুল হোসেন, আহসান হাবীব প্রমুখের রোমান্টিক কবিতার ধারা সযত্নে এড়িয়ে তিনি স্বতন্ত্র ধারার সাহিত্য সাধনা করেছেন। বাংলা ভাষায় আরবি—ফারসি শব্দের প্রয়োগ নৈপূণ্য এবং বিষয়বস্তু ও আঙ্গিকে অভিনবত্ব তাঁর কবিতা এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের হাতে এই সাহিত্য ধারার সূচনা হলেও মূলত ফররুখ আহমদের হাত ধরেই এই সাহিত্য ধারাটি বাংলা সাহিত্যে একটি প্রধানতম ধারায় পরিণত হয়। চল্লিশের দশকে ওপার বাংলার আধুনিক শক্তিমান কবি বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতো এপার বাংলার শক্তিমান কবি ফররুখ আহমদ।

কাব্যঃ ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘সাত সাগরের মাঝি’। এই কাব্যে ১৯টি কবিতা রয়েছে। এর মধ্যে ‘সিন্দাবাদ’ ‘আকাশ নাবিক’, ‘স্বর্ণ—ঈগল, ‘পাঞ্জেরী, প্রভৃতি কবিতায় দিশেহারা অধঃপতিত মুসলিম জাতিকে নতুন করে জেগে ওঠার আহবান জানিয়েছেন—

দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা
তবু জাগলে না, তবু তুমি জাগলেনা?”

মুসলমানদের সোনালি অতীত ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে সিন্দাবাদ নাবিকের বীরত্ব ও নতুন প্রেরণায় মুসলমানদের—
আত্ম জাগরণের সুর ধ্বনিত হয়েছে ‘সাত সাগরের মাঝি’ কাব্যের ‘সিন্দাবাদ’ কবিতায়। তাইতো বলতে শুনি—

“কেটেছে রঙিন মখমল দিন, নতুন সফর আজ,
শুনেছি আবার নোনা দরিয়ার ডাক,
ভাসে জোরওয়ার মউজের শিরে সফেদ চাঁদির তাজ,
পাহাড়—বুলন্দ ঢেউ বয়ে আনে নোনা দরিয়ার ডাক;
নতুন পানিতে সফর এবার; হে মাঝি সিন্দাবাদ।”

কবি ফররুখ আহমদের রোমান্টিক মন একদিন সভ্যতার সংকট দেখে বিমূঢ় হয়ে যায়। জীবন তখন সংকটাপন্ন। বাংলা ঘরে ঘরে ক্ষুধার হাহাকার। ইংরেজ শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ এবং দুর্ভিক্ষ (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) পীড়িত এসব মানুষের আর্তনাদে কবি বিক্ষুদ্ধ চিত্তে ‘লাশ’ (১৯৪৪) কবিতায় লিখেছেন—

“নির্লজ্জ দস্যুর
পৈশাচিক লোভ
করিছে বিলোপ
শাশ্বত মানব—সত্তা, মানুষের প্রাপ্য অধিকার,
ক্ষুধার্ত মুখের গ্রাস কেড়ে নেয় রুধিয়া দুয়ার,
মানুষের হাড় দিয়ে আজ গড়ে খেলা ঘর;
সাক্ষ্য তার পড়ে আছে মুখ গুঁঁজে ধরণীর পার।”

দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে মানবতাবাদী কবি ফররুখ আহমদ কলকাতা নগর এবং বৃহত্তর বাংলার জনজীবনের বিপন্ন চিত্র এঁকেছেন তাঁর অগ্রন্থিত কাব্য, ‘হে বন্য স্বপ্নেরা’ নামক এর নাম কবিতায়—

“অন্ধকার! গূঢ় অন্ধকার—
ভয়ঙ্করী এ রজনী বাহুতে জড়ায় কাল সাপ
মানুষী বিবেকে শুধু পড়িতেছে শয়তানী ছাপ
পাশব প্রতাপ।”

১৯৫২ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘সিরাজাম মুনীরা, গ্রন্থে রাসুল (সা.) খোলাফায়ে রাশেদীন, হযরত আব্দুল কাদের জিলানী, খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (র.) প্রমুখ ব্যক্তির সম্মানে কবিতা প্রকাশিত হয়। ‘সিরাজাম মুনীরা মুহম্মদ মুস্তফা’ কবিতায় রাসুল (সা.) এর প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন—

“পূর্বাচলের দিগন্ত নীলে সে জাগে শাহানশাহের মত
তাঁর স্বাক্ষর বাতাসের আগে ওড়ে নীলাভ্রে অনবরত।
ঘুম ভাঙলো কি হে আলোর পাখী? মহা নীলিমায়—ভ্রাম্যমাণ
রাত্রি রুদ্ধ কন্ঠে হতে কি ঝরে এবার দিনের গান?”

 

ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) এর প্রশংসায় কবি ‘আবু বকর সিদ্দিক’ কবিতায় নির্ভিকচিত্তে আশাবাদী হয়ে উচ্চারণ করেছেন—
“ইসলাম তরী ভাসালো আবার নিখিল মানসে আবু বকর
নবীজীর সাথী, ইসলাম—সাথী, মোমিন সঙ্গী শ্রেষ্ঠ নর।”
১৯৬৩ সালে প্রকাশিত কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘মুহুর্তের কবিতা’। এই কাব্যের অন্তর্গত ‘সাতান্নর কবিতা/এক’—এ ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের শততম বার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান ও কবিতা রচনা করেছেন। এ কবিতায় সেই শহীদের স্মরণে লিখেছেন—
‘একশো বছর আগে; তবু আজও আছে অমলিন
সে দিনের স্মৃতি গাঁথা শহীদের লাল রক্ত আঁকা;
রক্তঝড়ে—ঘূর্ণাবর্তে সে দিনের জেহাদী পতাকা
জেগে আছে বুকে নিয়ে জালিমের কৌশলী সঙ্গিন।”
কাব্যনাট্য ও কাহিনি কাব্যঃ কিংবদন্তি অমুসলিম দাতা হাতেম তায়ী তাঁর কবিতার একটি প্রধান চরিত্র। প্রাক—ইসলাম যুগের দানবীর হাতেম তায়ীকে নিয়ে ১৯৬১ সালে তাঁর একটি কাব্যনাট্য ‘নৌফেল ও হাতেম’ এবং ১৯৬৬ সালে একটি কাহিনি কাব্য ‘হাতেম তায়ী’ প্রকাশিত হয়। মানবতার নিঃস্বার্থ ও অক্লান্ত সেবার মাঝে এ গ্রন্থদ্বয়ে কবি ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়ননের পথ খুঁজে পেয়েছেন।

ব্যঙ্গ ও সনেট কবিতাঃ ইসলামি ভাবধারার কবি ফররুখ আহমদ ব্যঙ্গ ও সনেট কবিতা রচনায় বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছেন। তিনি ‘হায়াতদারাজ খাঁন’ ছদ্মনামে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সমকালে সমালোচনামূলক অনেক ব্যঙ্গ কবিতা রচনা করেছেন, তাঁর সৃষ্টিশীল লেখনীতে আরবি—ফারসি শব্দের বহুল প্রয়োগ ঘটলেও আধুনিক রোমান্টিক এই কবি বিষয় অনুসারে তার রচনার শব্দচয়ন ও বাক— ব্যঞ্জনাধমীর্ চিত্রকল্প নির্মাণ করেছেন। বাংলা সাহিত্যের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পরেই তিনি উৎকৃষ্ট সনেট রচনা করে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ আসন ও মর্যাদা লাভ করেছেন।

শিশুতোষ গ্রন্থ

১. পাখির বাসা (১৯৬৫)
২. নতুন লেখা (১৯৬৯)
৩. হরফের ছড়া (১৯৭০)
৪. ছড়ার আসর (১৯৭০)
৫. চাঁদের আসর (১৯৭০)
৬. চিড়িয়াখানা (১৯৮০)
৭. ফুলের জলসা (১৯৮৫)

শিশুদের জন্য বিখ্যাত ছড়া ও কবিতা

১. ঝুমকো জবা
২. বৃষ্টির ছড়া
৩. ভাষার গান
৪. মেঘ বৃষ্টি আলোর দেশ
৫. ফাল্গুনি।

এছাড়া রয়েছে ‘ধোলাই কাব্য’ (১৯৬৩), ‘কাফেলা’ (১৯৮০), ‘হাবেদা মরুর কাহিনি’ (১৯৮১), দিলরুবা (১৯৯৪) ইত্যাদি।
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ বাংলা সাহিত্যে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য তিনি ১৯৬০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬১ সালে ‘পাখির বাসা’ গ্রন্থের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার, ১৯৬৬ সালে ‘হাতেম তায়ী’ গ্রন্থের জন্য আদমজী পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর একুশে পদক পুরস্কার ১৯৮০ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

জীবনাবসানঃ আজীবন সাহিত্য সাধক এ শিল্পী শেষ জীবনে অবর্ণনীয় দুঃখ—কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর কুচক্রিদের পরামর্শে তিনি চাকরিচ্যুত হন। ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। কবি বন্ধু বেনজীর আহমদের ঢাকার শাহাজানপুরের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

পরিশেষে বলা যায়, মুসলিম পুনর্জাগরণের কবি ফররুখ আহমদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন শক্তিমান শিল্পী। সীমিত জীবন পরিসরে তিনি বিরল—দৃষ্ট শিল্প নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর ইসলামি জীবনবোধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভিত্তিক শিল্প সাধনা তথা কাব্য সাধনা উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো বাংলা সাহিত্যের আকাশে সদা দীপ্যমান হয়ে আছে। ড. আনিসুজ্জামানের ভাষায়, ‘বাংলা কাব্যের শ্রেষ্ঠ মৌলিক কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম।’ তাই বলা যায়, ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কালোত্তীর্ণ কবি।
তথ্যসূত্রঃ
১। স্মরণীয় বরণীয়— জাফর আলম
২। কবিতায় বাক—প্রতিমা— বিপ্রদাশ বড়–য়া
৩। ফররুখ আহমদ রচনাবলী— আব্দুল মান্নান সৈয়দ
৪। বিভিন্ন পত্র—পত্রিকা ও সাময়িকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.